সিডিএম ডিপার্টমেন্ট এর ২য় বারের মত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ভ্রমণ

Climate and Disaster Management Department 23 October, 2025

ক্লাইমেট এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট (সিডিএম) ডিপার্টমেন্ট গত ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ এ প্রথমবারের মত সুন্দরবন ভ্রমন করেছিল। সিডিএম ডিপার্টমেন্ট এর তিনটি ব্যাচ গত ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি ২য় বারের মত একাডেমিক কোর্স এর অংশ হিসেবে খুলনা  এবং পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পুরো ভ্রমণটি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম অংশে আমরা খুলনার দুটি সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করি। আর শেষ অংশে আমরা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে জানার সুযোগ পাই, বিশেষ করে সুন্দরবন-সংলগ্ন কমিউনিটির ওপর এসব প্রভাব কিভাবে পড়ছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।


দিন পঞ্জিকা-১:

 ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে আমরা সকাল ১০ টায় ক্যাম্পাস থেকে বাস যোগে যশোর স্টেশন এর উদ্দেশ্যে রওয়া হয়েছিলাম। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অফিস সহকারীসহ আমরা মোট ৬৪ জন ছিলাম। প্রথমে আমরা যশোর স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে খুলনা পৌঁছাই এবং দুইটি দলে বিভক্ত হয়ে যাই। একটি দল যারা ছিল ২য় বর্ষ ১ম ও ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টারের তারা বেরিয়ে পড়ে খুলনা আবহাওয়া অফিস পরিদর্শনে এবং আরেকটি দল ৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারের বেরিয়ে পড়ে ওয়ার্ল্ড ভিশন শীর্ষক এনজিও প্রদর্শন করতে। এরপর বিকেলে দুইটি দলই রেড ক্রিসেন্ট খুলনার অফিসে মিলিত হয় এবং খুবই সুন্দর একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত হয় ।

রেড ক্রিসেন্ট পরিদর্শন শেষে আমরা সুন্দরবন যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ি, এবং খুলনা ৪ নম্বর ঘাট থেকে লঞ্চ যোগে যাত্রা শুরু করি ।




দিন পঞ্জিকা-২:

২০ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে সুন্দরবন শিক্ষা সফরের প্রথম দিনের যাত্রা শুরু হয়েছিল বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অন্তর্গত আন্দারমানিক ইকোট্যুরিজম সেন্টার পরিদর্শনের মাধ্যমে।

ভোরের সোনালি আলোয় আমরা বনের ভেতরের সবুজে ঘেরা ট্রেইল ধরে হাঁটতে হাঁটতে পরিচিত হই নানান প্রজাতির গাছপালা এবং বনের স্বতন্ত্র জীববৈচিত্র্যের সাথে। পথে দেখা মেলে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীরও। বন, নদী, খাল আর গাছপালাকে ঘিরে যে অনন্য উপকূলীয় বাস্তুসংস্থান গড়ে উঠেছে, সেই পরিবেশকে কাছ থেকে অনুভব করার সুযোগ হয় আমাদের।

দ্বিতীয় দিনের এই অভিজ্ঞতার পর আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল কটকা। কটকা সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণীয় ও জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ এলাকা। এখানে বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, ঘন অরণ্য, খাল–নদীর মিলিত জলপথ এবং বন্যপ্রাণীর বিচরণ—সব মিলিয়ে কটকা যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব মুক্ত প্রাঙ্গণ। কটকায় গিয়ে আমরা ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভেঙে যাওয়া কিছু গাছপালার ধ্বংসাবশেষও দেখতে পেয়েছিলাম।এর থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি কিভাবে সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড়ের গতিকে কমিয়ে দিয়ে প্রলয়ের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছিলো।

এই দুইটি জায়গা পরিদর্শনের পর আমরা যথারীতি আমাদের লঞ্চে ফিরে আসি এবং সেখানে বিভিন্ন খেলাধুলার এবং খাওয়া দাওয়ার দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল।





দিন পঞ্জিকা-৩:

২১ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে ভোর ৫ টার সময় আমরা বেরিয়ে পড়ি জামতলা সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনে। এই দিন পায়ে হেঁটে আমরা মোট ৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করি। ঘন জঙ্গল পাড়ি দিয়ে আমরা সৈকত ধারে পৌঁছাই এবং সেখানে সূর্যোদয় উপভোগ করি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সাগরের গর্জন মিলেমিশে সেখানে এক ভিন্ন রকম, মন্ত্রমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল ডিমের চর। ডিম্বাকৃতি হওয়ার কারণে এ এলাকার নাম হয়েছে ডিমের চর। যেখানে বিস্তীর্ণ কাশফুলের সমারোহ চারপাশকে আরও মনোরম করে তুলেছিলো। চরের খোলা বাতাস আর শান্ত পরিবেশ এক বিশেষ অনুভূতির সৃষ্টি করেছিল। সেখানে পৌঁছে ছেলেদের মাঝে একটি আনন্দময় ফুটবল খেলার আয়োজনও করা হয়েছিল।

এরপর বিকালে আমরা কচিখালি সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনে বের হই । ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমরা সৈকত ধারে পৌঁছাই। যাত্রাপথে হরিণের ঝাঁক, বন্য শূকরসহ নানা বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে। এছাড়াও বালুকাময় সৈকতের পাড়ে দাঁড়িয়ে আমরা মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করি।



দিন পঞ্জিকা-৪:

২২ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে আমরা করমজল, সুন্দরবন পরিদর্শনে বের হই, যা সরণখোলা রেঞ্জে অবস্থিত। যেখানে আমরা হরিণ, কুমির প্রজনন কেন্দ্র এবং বন সংরক্ষণ বিষয়ে প্রদর্শনী দেখি। এছাড়াও করমজলে আমরা বানরের অবাধ বিচরণ দেখতে পাই।

করমজল পরিদর্শন শেষে আমরা কানাইনগর কমিউনিটিতে যাই এবং সার্ভে পরিচালনা করি । এর মাধ্যমে আমরা তাদের জীবিকা, বননির্ভরতা ও দুর্যোগ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানতে পারি। তারা সাইক্লোন, লবণাক্ততা ও নদীভাঙন রোধে তাদের স্থানীয় মোকাবিলা কৌশল তুলে ধরে। এরপর আমরা লঞ্চে ফিরে যাই এবং সেখানে দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে, বাসযোগে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হই।

 


এই সুন্দরবন শিক্ষা সফর আমাদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা ছিল। এই সফরের মাধ্যমে আমরা বনের জৈববৈচিত্র্য, খাল–নদী ও উপকূলীয় বাস্তুসংস্থানের প্রকৃত পরিবেশের সঙ্গে সরাসরি পরিচিত হতে পেরেছি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশে পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ আমাদের পরিবেশ সচেতনতা ও বাস্তব জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। সমগ্র সফরটি একাডেমিক ও মনোরম দিক থেকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।